বজ্রপাতের সুন্দর ও বিস্ময়কর আদ্যোপান্ত!

avatar

আজকে ১১ টার পর থেকেই হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে বৃষ্টির চেয়ে বজ্রপাত বেশি হচ্ছিল। আমার বজ্রপাত কেন যেন ভাল লাগে। বজ্রপাত ছাড়া বৃষ্টি পানসে মনে হয়। মানে ঠিক বৃষ্টি বৃষ্টি অনুভূতি আসে না। তবে বজ্রপাত যতই ভাল লাগুক না কেন, এটা কিন্তু কম ভয়ংকর না। শেষ কয়েকবছর ধরে যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়েন কিংবা খবর শুনেন, তারা খেয়াল করে দেখবেন যে এদেশে হুট করে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। যায় হোক, আজকে আমি বজ্রপাত নিয়ে নিজে যতটুকু জানি শেয়ার করবো।

img_0.676767356432848.jpg

যারা বৃষ্টির সময় আকাশ দেখতে ভালোবাসেন তারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন, বিদ্যুৎ চমকালে তথা বজ্রপাত হলে সবসময় একরকম নয় বরং বিভিন্ন রঙের আলোক রশ্মি দেখা যায়। ভেবে দেখেছেন কেন বজ্রপাতে সাদা, লাল, নীল, বেগুনি বা সবুজাভ আলোর রেখা দেখতে পারেন?

আমাদের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে বজ্রপাত সম্পর্কে ভুল ধারণা আছে। আমরা জানি বা ভাবি, বজ্রপাত মেঘের সাথে মেঘের ঘর্ষণে সৃষ্টি হয়! কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আসলে, জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে যখন মেঘে পরিণত হয় তখন এতে প্রচুর পরিমাণ স্থির বৈদ্যুতিক চার্জ জমা হয়। অপেক্ষাকৃত হালকা ধনাত্মক চার্জ মেঘের উপরে ও ভারী ঋণাত্মক চার্জ মেঘের নিচে অবস্থান করে। মেঘে যখন এই দুইটি বিপরীতধর্মী চার্জ যথেষ্ট পরিমাণে জমা হয় তখন বিপরীতধর্মী আধানের আকর্ষণ প্রবণতার কারণে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জিং প্রক্রিয়ার শুরু হয় এবং বায়ুর মধ্যে দিয়ে বৈদ্যুতিক স্পার্ক প্রবাহিত হয়, যেটি মূলত বজ্রপাত হিসেবে আমরা দেখি।

img_0.02125511797804999.jpg
বজ্রপাতের সম্পর্কে ছোট কিছু ধারনার জন্য এই ছবিটা যথেষ্ঠ। Source: Scince Learn

তবে সব বজ্রপাত ভূমিতে এসে পৌঁছায় না। মেঘের আধানের সাথে বিপরীতধর্মী কোথাকার আধানের আকর্ষণ হবে তার ভিত্তিতে বজ্রপাত মোটামুটি কয়েক ধরনের হয় :

১) Intercloud lightning: যখন একটি মেঘের নিজস্ব অধানসমুহ পরস্পরকে আকর্ষণ করে নিউট্রালাইজ হয়।

২) Cloud to cloud lightning: যখন দুটি মেঘের মধ্যকার অধানসমুহের মধ্যে আকর্ষণ ঘটে নিউট্রালাইজ হয়ে বজ্রপাত ঘটে।

৩) Cloud to ground lightning: আমরা যে বজ্রপাত দেখি মূলত এটিই। মেঘের ধনাত্মক আধানের সাথে ভূপৃষ্ঠের ঋণাত্মক আধানের আকর্ষণ দরুন যে ডিসচার্জ ঘটে এবং বিপুল পরিমাণ চার্জ ভূমিতে এসে আঘাত করে নিউট্রালাইজ হয়।

এছাড়াও Anvil Crawlers, Cloud-to-Air Lightning, Bead Lightning, Ribbon Lightning, Sheet Lightning ইত্যাদি অনেক ধরনের বজ্রপাত হয়।

img_0.6827164871901488.jpg
Source: Pixabay

আমরা সবাই এইটা জানি যে, বায়ু বিদ্যুৎ অপরিবাহী। তারপরও বজ্রপাতের সময় আমরা যে আলো দেখতে পাই তা মূলত বায়ুর সরু চ্যানেলের আয়নিত পরমাণু থেকে বিকীর্ণ শক্তির তীব্র আলোক ছটা। মেঘে জমা হওয়া স্থির বিদ্যুৎ অতি উচ্চ বিভব সম্পন্ন হওয়ায় তা বায়ুর সরু চ্যানেলকে আয়নিত করে পরিবাহী পথের সৃষ্টি করে। এই সরু ,আয়নিত ও বিদ্যুৎ পরিবাহী চ্যানেল তৈরীর সময় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় ২৭০০০° c এবং চাপ প্রায় ১০-১০০ গুন পর্যন্ত বেড়ে যায় । এই পুরো ঘটনাটি ঘটে এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ে । এ পরিবর্তন আশপাশের বাতাস কে প্রচন্ড গতিতে বিস্ফোরণের মতো সম্প্রসারিত করে । এর ফলে প্রবল শব্দ উৎপন্ন হয় । এই শব্দকেই আমরা বজ্রপাতের শব্দ হিসেবে শুনি ।

img_0.44094626566421125.jpg

এখন প্রশ্ন হতে পারে, বজ্রপাত রঙিন হয় কেন... তাই না?

সাদা বর্ণ হওয়ার কারণ: যদি বজ্রপাত থেকে আমাদের দুরত্ব বেশি না হয় এবং পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকে । তবে এই রং দেখা যায়। দুরত্ব কম হওয়ার কারণে আলোকে বেশি দূর যেতে হয় না। ফলে আলোর বিচ্ছুরিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাছাড়া পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকায় আলো ধূলিকণার দ্বারা বেশি বিচ্ছুরিত হয় না। তাই সাদা বর্ণ অখন্ড থাকে।

হলুদ বর্ণ হওয়ার কারণ: যদি বজ্রপাতের স্থান থেকে আমাদের দুরত্ব বেশি হয় এবং পরিবেশ দূষণের প্রভাবে প্রচুর ধূলিকণা উপস্থিত থাকে। তবে এই হলুদ বর্ণ দেখা যায়। বিচ্ছুরণের প্রভাবে শুধু উচ্চ তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোই আমাদের চোখে এসে পড়ে। তাই লালচে হলুদ বর্ণের আলো দেখা যায় ।

লাল , সবুজ ও বেগুনি বর্ণের কারণ: আমাদের বায়ুমন্ডলের মূল উপাদান হল অক্সিজেন আর নাইট্রোজেন । বজ্রপাতের উচ্চ উষ্ণতার প্রভাবে এই অক্সিজেন আর নাইট্রোজেন উত্তেজিত হয়ে যায় এবং সেই উত্তেজিত স্তর থেকে ভূমিস্তরে নেমে আসার সময় এরা নির্দিষ্ট বর্ণের আলো নিঃসরণ করে। যেমন — অক্সিজেন নিঃসরণ করে সবুজাভ হলুদ অথবা লাল বর্ণ । নাইট্রোজেন নিঃসরণ করে বেগুনি অথবা নীল বর্ণের আলো।

img_0.9253475621803047.jpg

আমাদের চারপাশে কত অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস ছড়িয়ে আছে, তাই না? খুব ছোট ছোট স্বাভাবিক জিনিসগুলো নিয়ে যখন ঘাটাঘাটি করি, তখন এমন অনেক কিছুই জানতে পারি আর মুগ্ধ হই। তাই আমার নিজের মুগ্ধতাগুলো আপনাদের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়া চেষ্টা করছি...



0
0
0.000
5 comments
avatar

খুবই তথ্যবহুল একটি লিখা,ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
তবে ভাইয়া, @reza-shamim
লিখাটি ফেইসবুক থেকে নেওয়া নাকি? প্রথম ও শেষাংশ বাদে সম্পূর্ণ লিখাটি ফেইসবুক এর একটি লিখার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। লিখাটির লিঙ্ক ঃ https://www.facebook.com/101087188849480/posts/104986181792914/
এখন সেটি কি আপনার ই লিখা নাকি কপি পেস্ট একটু ক্লিয়ার করে দিলে ভালো হতো।

0
0
0.000
avatar

ভুল বুঝাবুঝির জন্য দুঃখিত। তবে এই লেখাটি আমার আরো দুই বছর আগের লেখা, যা রিসেন্টলি আমার ফেসবুক আইডিতে আবার নতুন করে শেয়ার করেছিলাম। আপনি যদি আমার ফেসবুক আইডিতে যুক্ত থাকেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে আমি যে কোনো টপিকে লাস্ট ৫-৬ বছর ধরে লেখালেখি করে আসছি এবং বিভিন্ন পেইজ বা গ্রুপে সেসব নিয়মিত শেয়ার করা হয়।

0
0
0.000
avatar

তাহলে আপনার প্রোফাইলের সেই আগের লিখাটির লিঙ্কটি এড করে দিলে ভালো হয়।ভুল বুঝাবুঝি টা দূর হয়ে যাবে। ধন্যবাদ।

0
0
0.000