অসীম মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র এক গ্রহ: আমাদের পৃথিবী।

avatar

images (6).jpeg
Earth from Mars.

উপরের ছবির ঐ বিন্দুটা দেখতে পাচ্ছেন? হ্যাঁ, এইটাই আমাদের পৃথিবী। ছবিটা মঙ্গল গ্রহ থেকে তোলা হয়েছিল। মঙ্গলের মতো খুব কাছের একটা গ্রহ থেকে যখন আমাদের এই পৃথিবীটাকে এত ছোট মনে হয়, তখন অসীম মহাবিশ্বে আমাদের পৃথিবীর অবস্থান কতটুকু? চিন্তা করলেও অবাক মনে হয়, তাই না?

আমাদের লাখ লাখ বছরের মানব সভ্যতার যত ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তার সবই এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর মাঝেই হয়েছে। আমাদের পরবর্তী সময়ের যা ইতিহাস তৈরি হবে, তাও এই ক্ষুদ্র গ্রহটাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হবে। ভাবতেও অবাক লাগে। আমাদের কাছে আমাদের পৃথিবীটা সুবিশাল মনে হলেও আদতে এই অসীম মহাবিশ্বে তা ক্ষুদ্র একটা বিন্দুর মতো দূরবর্তী কোনো গ্রহ থেকে খালি চোখেও তা হয়তো কখনোই চোখে পড়বে না। অথচ এই ক্ষুদ্র পৃথিবীতেই আমরা মানুষেরা লাখ লাখ বছর ধরে সারভাইব করে যাচ্ছি প্রবল প্রতাপে।

images (7).jpeg
Earth from Moon.

মানব সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে হয়তো দেখা যাবে যে নানা সময় নানা রকম প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। কখনো কখনো প্রকৃতি আমাদের উপর নাখোশ হয়ে আমাদের শাস্তি দিতে চেয়েছে। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো কিংবা ক্ষুদ্র ভাইরাসের মাধ্যমে মানব অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা কি প্রবল প্রতাপের সাথে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারি নি? প্রকৃতিকে নিজের বশ্যতা স্বীকার করাতে পারি নি?

সে যায় হোক, অসীম মহাবিশ্বের এই ক্ষুদ্র পৃথিবীতেই আমাদের অবস্থান। আমাদের অতীত ইতিহাসে যা যা কিছু ঘটেছে, সব এখানেই ঘটেছে। যত বড় বড় যুদ্ধ-বিদ্রোহ, গণহত্যার ইতিহাস পাওয়া যায়, সব এখানেই হয়েছে। যত বড় বড় রাজা, মহারাজা, সেনাপতি, মহানায়কের জন্ম হয়েছে, সব এখানেই হয়েছে। এমনকি ইতিহাসে যেসব খারাপ মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে, তারাও সবাই এই পৃথিবীরই মানুষ। বাইরে থেকে কেউ আসে নি এখানে।

images (8).jpeg
Earth From Satelite.

এই ছোট্ট পৃথিবীর মতো এত প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ইতিহাস কি পুরো মহাবিশ্বের আর কোথাও আছে? থাকতেও পারে। অসীম এই মহাবিশ্বের কতটুকুই বা জানি আমরা? কিছুদিন আগে নাসার একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। সেখানে একজন বিজ্ঞানী লিখেছিলেন যে পুরো মহাবিশ্বের ৫ পার্সেন্টও এখনো আমরা জানতে পারি নি। তবে উনার এই কথার সাথে আমার একটু দ্বিমত আছে। যেখানে আমরা এখনো অসীম মহাবিশ্বের কোনো সীমা নির্ধারন করতে পারি নি, সেখানে কিভাবে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমা নির্ধারন করতে পারি?

মহাকাশ, মহাবিশ্ব নিয়ে আমার আগ্রহ কিছুটা আছে। সুযোগ পেলে এই সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি দেখার চেষ্টা করি। ছোট থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু জার্নালও পড়ার সুযোগ হয়েছে। আমি শুধু অবাক হয়ে ভাবি, গত শতাব্দী থেকে এখন পর্যন্ত মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মহাকাশ জয়ের উদ্দেশ্যে কত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মহাকাশের ঠিকানাবিহীন উদ্দেশ্যে একটার পর একটা রকেট পাঠিয়ে যাচ্ছেন। যার কোনো কোনোটা হারিয়ে গিয়েছে, কোনোটা ধ্বংষ হয়ে গিয়েছে, কোনোটা গত কয়েক দশক ধরে এখনো অসীম কোনো এক উদ্দেশ্যের পানে এগিয়ে চলছে।

images (8).jpeg
Earth From Space Station.

তবে এই ছুটে চলার মাঝেও রকেটগুলো আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটার পর একটা তথ্য পাঠিয়ে যাচ্ছে। দূর দূরান্তের গ্রহ উপগ্রহের ছবি পাঠাচ্ছে, তাদের আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য পাঠাচ্ছে। এর মাধ্যমেই আমরা জানতে পারছি আরো কয়েক লাখ আলোক বর্ষ দূরে পৃথিবীর মতোই নীল সবুজের আরেকটি গ্রহ আছে। সেখানে জীবনের অস্তিত্ব আছে কি-না, তা আমরা জানি না। আমাদের যে ক্ষমতা, প্রযুক্তি, তা ব্যাবহার করে সেখানে পৌছাতে হয়তো লাখ লাখ বছর পেরিয়ে যাবে।

images (11).jpeg
চন্দ্রবিজয়।

তবে বিজ্ঞানের প্রতি আমার ভরসা আছে। একসময় কে চিন্তা করেছিল মানুষ চাঁদে যাবে? কিন্তু চাঁদে তো ঠিকই গিয়েছে। ঠিক তেমনি এবারও হয়তো বিজ্ঞানীরা এমন কিছু তৈরি করবে যার মাধ্যমে আমরা মহাকাশের কোটি বছরের দূরত্বকে কমিয়ে আনতে পারবো।

images (12).jpeg
Movie Poster: Interestaller

ক্রিস্টোফার নোলানের ইন্টারেস্টলার মুভিটি দেখা হয়েছে? সেখানেও কিন্তু বিজ্ঞানীরা মহাকাশের এমন একটা লুপ/হোল আবিষ্কার করেছিলেন যার মাধ্যমে নিমিষেই লাখ বছরের দূরত্বকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে কনভার্ট করে ফেলেছিলেন। কে জানে, হতো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের বিজ্ঞানীরাও এমন কিছু করে পুরো পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে।

আচ্ছা, আরেকটা প্রশ্ন। এলিয়েন সম্পর্কে আপনাদের ভাবনা কী? কি মনে হয়, মহাবিশ্বে এলিয়েনের অস্তিত্ব আদৌ আছে? নাকি সবই কল্পনা? পুরো মহাবিশ্বে একমাত্র আমাদের পৃথিবীতেই জীবনের অস্তিত্ব আছে, আর কোথাও নেই?

বিজ্ঞান এখনো এলিয়েনের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে নি। তবে সরাসরি নাকচও করে দিচ্ছে না। মহাবিশ্বে জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে একটার পর একটা রকেট পাঠিয়ে যাচ্ছেন। সে সব রকেটের দেয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন।

তবে এ সবই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের কাজ। আমি তো বিজ্ঞানী না, আমি শুধু কল্পনা করতে পারি। আমার কল্পনায় আমি দেখতে পাই আমাদের মহাবিশ্বের আশেপাশের কোথাও আমাদেরই মতো আরো একটি পৃথিবী আছে। সেখানে জীবনের অস্তিত্বও আছে। তারা হয়তো আমাদের চেয়েও বেশি উন্নত। তাদের বিজ্ঞানীরা হয়তো আমাদের দিকে নজর রাখছে। অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। অথবা অষ্টাদশ শতাব্দীর পর শিল্প, জ্ঞান ও বিজ্ঞানে আমাদের যত উন্নতি, তার সবকিছুতেই ওদের অবদান আছে... হতে পারে না এমন?

images (13).jpeg
Movie Poster: 2001: A Space Odessey

কিছুদিন আগে একটা মুভি দেখেছিলাম। মুভির নাম "2001-A Space Odessey. আরো ষাট বছর আগে মুভিটি তৈরি করা হয়েছিল। মুভিটির মূল বিষয় তৈরি হয়েছে একটি পাথরকে কেন্দ্র করে। যে পাথরের সংস্পর্শে এসে মানুষ প্রথম অস্ত্রের ব্যাবহার শিখেছিল, এরপর আগুনের ব্যাবহার শিখেছিল। এবং সবশেষে জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম শিখরে অবস্থান করেছে। মুভির এই পিলারের মাধ্যমে মূলত এলিয়েনদেরকই রূপক অর্থে বুঝানো হয়েছে।

images (10).jpeg
Our Planet

তবে উপরের এ সবকিছুই কল্পনা, মানব মনের বিক্ষিপ্ত চিন্তা ভাবনা। বাস্তবতা জানার জন্য আমাদের বিজ্ঞানীদের উপরই নির্ভর করতে হবে। হয়তো খুব শীগ্রই আমরা এমন কিছু জানতে পারবো, যা আমদের পুরো পৃথিবীকেই চেইঞ্জ করে দিবে। অথবা পুরো মানব জাতিকে অবাক করে নতুন করে নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি হবে।

ALL PICTURE COLLECTED FROM NASA'S OFFICIAL WEBSITE. BUT MOVIE'S PICTURE COLLECTED FROM WIKIPEDIA.



0
0
0.000
0 comments