ভয়েজার: যে যন্ত্র ছুটে চলছে অসীম শূণ্যতার দিকে...
ভয়েজার নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময় মাঝে মাঝে আমার নিজেরই ভয়েজার হয়ে যেতে ইচ্ছে অরে। আজ প্রায় ৪৪ বছর ধরে এটি ছুটে চলছে। ছুটছে তো ছুটছেই, ছুটতে ছুটতে আমাদের সৌরজগতের সীমানাও পেরিয়ে গেছে আরো কয়েক বছর আগে। ভাবা যায়, মানুষের তৈরি ছোট্ট এই যন্ত্রটি আজ মানুষের পৃথিবী থেকে কয়েক বিলিয়ন মাইল দূরে চলে গিয়েছে? ২০১৪ সালে নাসার তথ্য মতে ভয়েজার ১ পৃথিবী থেকে প্রায় বারো বিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করছিল। সে হিসেবে আজ প্রায় ৭ বছর পর সেই দূরত্বটা বেড়ে আরো বেশি হবার কথা, তাই না?
উপরের যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে, সেটি ২০১৪ সালের, যখন ভয়েজার আমাদের সীমানা পার হয়ে যাচ্ছিল। নাসার বিজ্ঞানীরা ভয়েজারের ক্যামেরা শেষবারের মতো পৃথিবীর দিকে ফোকাস করে এই ছবিটি তুলেছিল। এরপরেই ভয়েজারের ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়া হয়। এই বিশাল কালো গহবরের মাঝখানে ছোট্ট উজ্জ্বল যে বিন্দুটি দেখা যাচ্ছে, সেটিই আমাদের পৃথিবী। এই ছোট বিন্দুটিতেই হাজার হাজার বছর ধরে আমরা বসবাস করে আসছি। ভাবতেও অবাক লাগে, মহাবিশ্বের তুলনায় কত ক্ষুদ্র আমাদের এই পৃথিবী, অথচ আমাদের কাছে বিশাল...
১৯৭০ সালে নাসা সর্বপ্রথম মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণা ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ভয়েজার ওর প্ল্যান হাতে নেয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭৭ সালের ২০ আগস্ট ভয়েজার ২ মহাশূণ্যে প্রেরণ করা হয়। তার প্রায় এক মাস পর অর্থাৎ ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ভয়েজার ১ মহাশূণ্যে প্রেরণ করা হয়। আর সেই যে ভয়েজার নামক স্পেস প্রোবগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ অবধি সেই যাত্রা এখনো চলমান আছে। সৌরজগতের সীমান পেরিয়ে এখন তারা পার করছে ইন্টারেস্টলার, অর্থাৎ এক তারা থেকে অন্য তাঁরার মধ্যবর্তী দূরত্ব। মহাকাশের অতল গহ্বরের সব কিছু ছাড়িয়ে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে অজানার উদ্দেশ্যে আর আমাদের কাছে পাঠাচ্ছে মহাকাশের অজানা সব বিচিত্র খবরাখবর!
১৯৭৯ সালে বৃহস্পতি গ্রহ এবং ১৯৮০ সালে শনি গ্রহের সিস্টেমের মুখোমুখী হবার পর ১৯৮০ সালের ২০ নভেম্বর এর প্রাথমিক মিশন শেষ হয়। এটিই ছিল প্রথম প্রোব যা দুটি গ্রহের এবং এদের উপগ্রহের বিশদ তথ্য এবং ছবি দিতে সক্ষম হয়। ভয়েজার ১ হল ভয়েজার প্রোগ্রাম এর অংশ এবং ভয়েজার ২ সাদৃশ্য যার কাজ সৌরজগতের সীমানা কুইপার বেল্ট, হেলিওস্ফিয়ার এবং নক্ষত্রমন্ডলের মধ্যবর্তী এলাকার তথ্য প্রেরণ করা। মাত্র পাঁচ বছরের প্ল্যান নিয়ে বানানো ভয়েজার স্পেস প্রোবগুলো এত বছর ধরে যে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে, তা মানুষের ক্ষমতা যে কত উপরে উঠতে পারে, তারই ইঙ্গিত দেয়।
তবে আমার কাছে যে তথ্যটা সবচেয়ে বেশ অবাক লেগেছে, তা হল ভয়েজারের পুরো সিস্টেম চালাচ্ছে মূলত ৬৮ কিলোবাইট মেমরির ছোট একটি কম্পিউটার। এত অল্প মেমরি সম্পন্ন ছোট্ট এই কম্পিউটারটি দ্বারা কিভাবে এত বছর ধরেও ভয়েজার অক্ষুন্ন অবস্থায় আছে, সেটা ভেবে আমি প্রতিনিয়ত অবাক হই।
ভয়েজারে অবশ্য কিছু রেকর্ড রেখে দেয়া হয়েছে। যেমন মানুষের ছবি, বিভিন্ন ভাষার শব্দ, প্রাণিজগতের বিভিন্ন শব্দসহ মানব সভ্যতার নানা নিদর্শন। যদি কখনো কোনো ভাবে ভয়েজারের সাথে মহাবিশ্বের অন্য কোনো সভ্যতার দেখা হয়ে যায়, তাহলে তারা যেন আমাদের পৃথিবী সম্পর্কে নূন্যতম কিছু ধারনা নিতে পারে, সে জন্যই এমন ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় মহাবিশ্বের অন্য সব সভ্যতার জন্য বিভিন্ন রকমের অভিবাদনও রয়েছে সেখানে।
তো শুরুতে যা বলছিলাম, ভয়েজার নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময় কেন যেন আমার নিজেরও ভয়েজার হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মনে হয় আমিও যদিও ভয়েজারের মতো অসীম কোনো অজানায় পাড়ি দিতে পারতাম, তাহলে কত না ভাল হতো। কিন্তু যা কখনো সম্ভব না, তা সবসময় আমাদের মনে অতৃপ্তির জন্ম দেয়।
বনফুলের ছোট গল্প নিম গাছের শেষ লাইনটুকু মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে এখন।তাই সেই লাইনগুলো দিয়েই আজকের লেখাটা শেষ করি। "নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলো না। মাটির ভিতরে শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।"
Congratulations @reza-shamim! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 9000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz: