প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ (০১) : সময়ের বরকত (Utility of Time)

avatar

সূচনাঃ

মাঝে মাঝে কিছু বিষয় মাথায় ঘোরপাক খায়। আর সেগুলোকে কাগজে কলমে রূপ দিতে ইচ্ছে করে। তাই বিডিকমিউনিটি ধারাবাহিকভাবে আরেকটি সিরিজ লিখা শুরু করতে যাচ্ছি। এই সিরিজের নাম প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ । যে কোন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে এই সিরিজে লিখব। তো দেরী না করে আজকে অর্থাৎ প্রথম পর্বে চলে যাওয়া যাক…

1.jpg

সময়ের বরকতঃ

সময়ের সাথে সাথে এবং অবস্থার প্রেক্ষিতে দিনে দিনে আমরা যতই যান্ত্রিক হয়ে উঠছি ততই আমাদের সময়ের বরকত যেন কমে আসছে। এ কথা কেন বলছি? কারণ বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাই, যে দিকেই কোন কাজে হাত দেই না কেন, সময় খুব কম। কি এর কারণ বা কেন এমন হচ্ছে এর পিছনে কি কোন যৌক্তিক বিষয় রয়েছে? আজকে এই বিষয়টা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যাক।

প্রথমেই আমি আগেকার সময়ের কিছু লোকজনের উদাহরণ দিতে চাই। আগে অনেক মনীষী, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, শিল্পী, ধর্মীয় ব্যক্তিদের জীবনী থেকে দেখতে পায় তারা তাদের ৪০/৫০/৬০ বছরের জীবনে এত এত লেখা এবং সমাজের জন্য এত এত অবদান রেখে গেছেন যা অকল্পনীয়। এরকম অনেক অনেক উদাহরণ রয়েছে আমাদের সামনে। একজন মানুষ তার এই অল্প সময়ের জীবনের মধ্যেই দেশ-বিদেশ ঘুরে ঘুরে ৪০ হাজারেরও বেশি হাদিস সংগ্রহ করে সংকলন করেছেন এরকম যেমন আছে আবার আছে পাঁচ শতাধিক এরও অধিক অ্যালবাম বের করা শিল্পী বা ৪ শতাধিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার অথবা ৩ শতাধিকেরও বেশি পরিমাণ সিনেমা করা কোন নায়ক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই যদি বলি, এই অল্প জীবনের মধ্যে করেছেন কতকিছু। যুদ্ধ, সংগ্রাম, জেল, আন্দোলন, রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে পরিবার সবকিছুই এই অল্প সময়ের মধ্যেই করেছেন। তখনকার ভালো ফটোকপি এবং ভালো কম্পোজিং ছাড়াই রবীন্দ্রনাথ যত সাহিত্য লিখেছেন বা শরৎচন্দ্র যত উপন্যাস লিখেছেন বা বর্তমান সময়ের হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য কর্মের কথা বললেও ভুল হবে না। ধর্মীয় বই লেখার ব্যাপারে ডঃ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের কথা বলা যেতে পারে যিনি পড়াশোনা শেষ করার পরে কলম ধরেছেন আর অল্প সময়েই লিখেছেন বেশ কিছু বই। এসব কাজের জন্য উল্লিখিত কেউ কিন্তু সংসার, পরিবারের বাইরে চলে যাননি।

এখনকার সময়ে আমাদের মানুষের মধ্যে ট্যালেন্ট বা যোগ্যতা নেই একথা বলা যাবেনা। বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর দুনিয়ায় আমাদের হাতে অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিপণ্য রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে আমাদের কাজ সহজ এবং দ্রুততম সময়ে করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে আসছে। যেমন যদি বলি টাইপিং এর কথা কিংবা কোন কিছু নোট করে রাখার কথা তাহলে আমাদেরকে কাগজ-কলম নিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছেনা। বরং যেকোনো জায়গায় আমাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমরা এই কাজগুলো করতে পারছি। আমাদের ক্যাপাসিটি ওই ফ্লপি কিন্তু তারপরেও বর্তমান সময়ের কেউ কেন এতগুলো বই লিখতে পারছেন না বা এতগুলো গান কম্পোজ করতে পারছেন না বা এতগুলো চিত্রকর্ম আঁকতে পারছেন না? আমরা ফ্লপি ডিস্কের মেগাবাইট কেপাসিটি থেকে হার্ডডিস্কের টেরাবাইটে এসেছি। কিন্তু তখন ডকুমেন্ট সংরক্ষণের জন্য যেভাবে ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহার করতাম সেভাবে কি হার্ডডিস্ককে ব্যবহার করছি। গান, বাজনা ইত্যাদি দিয়েই স্পেস ভর্তি হয় এখন।

hydrant-58859_1920.jpg

Source: Image by Hans Braxmeier from Pixabay


তাহলে কি আগের সময়ের এইসব বিজ্ঞানী মনীষী শিল্পীরা সংসার ধর্ম থেকে বিরত থাকতেন! মোটেও না। তারা যে কাজগুলো করেছেন এগুলো তাদের সংসার এবং যাবতীয় জৈবিক চাহিদার মধ্যে থেকেই করেছেন। তাহলে প্রযুক্তি কি আমাদের সময় বাঁচিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নাকি প্রযুক্তি আমাদের সময়কে অপচয় করার কাজে লাগছে, এই বিষয়টি এখন ভেবে দেখার প্রয়োজন।

হ্যাঁ, প্রযুক্তির কারণে দেখুন আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। আমরা চাইলেই এখন মুহূর্তে আমাদের যে কোন বন্ধুকে অথবা আত্মীয় কে ফোন করে তার খবর নিতে পারি বা তার কুশলাদি বিনিময় করতে পারছি। কিন্তু কতজন রাখছি!!! সোশ্যাল মিডিয়াতেও আমরা বিভিন্ন খবরা-খবর রাখতে পারছি। কিন্তু আগে যখন চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতো তখন আমরা কোথায় পৌঁছাব, কখন পৌছাব এই বিষয়ের ক্ষেত্রে চিঠিতে জানিয়ে দিলে হয়তবা সময় হেরফের হতো না কিন্তু এখন মোবাইল ফোনে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ করার পরও সময় মতো দেখা করা যায় না।

প্রযুক্তি আমাদেরকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রযুক্তির কারণে আমরা ক্রিয়েটিভ অনেক কাজের ক্ষেত্রে আমাদের সময়কে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি না কারণ আমাদের অনেকেই ফেসবুকে আসক্ত আমাদের অনেকেই আছে যারা গেমসে আসক্ত আবার অনেকেই আছে যারা ভার্চুয়াল জগতে চ্যাটিং ও চ্যানেল ঘুরে ঘুরে ভিডিও দেখে। একটা পরিসংখ্যান এরকম ছিল যেখানে বলা হয়েছে বর্তমান সময়ে কিছু সময়ের জন্য স্মার্টফোন টাকে হাতে না নিয়ে থাকতে পারেনা। তাহলে যতোবারই স্মার্টফোন হাতে নিচ্ছে ডাটা সার্ভিস টা অন করে একবার ঢু মেরে আসতে ইউটিউব, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক কিংবা অন্যকোন ভার্চুয়াল জগত থেকে। এতে করে কোনো কাজে মনোযোগ যেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাশাপাশি আমরা এই জগতে আসক্ত হয়ে পড়ছি ফলে সর্বোপরি যা হওয়ার তাই হচ্ছে অর্থাৎ আমরা আমাদের মূল্যবান সময় গুলো কে আগের মতো ভালো কাজে লাগাতে পারছি না। আর তাই সময়ের বরকত কমে যাচ্ছে। একটুতেই একটু কাজ করতে গেলে দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি সপ্তাহ যেন দুই তিন দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি জানিনা এরকম টি সবার ক্ষেত্রে হচ্ছে কিনা তবে আমার ক্ষেত্রে ইদানিং এ বিষয়টি আমি খুব লক্ষ্য করছি। কয়েক ঘণ্টায় একটি দিন শেষ হয়ে যায়, ২/৩ সপ্তাহেই যেন একটি মাস শেষ হয়ে যায়। আর এটা হয় কেবল সময়ের বরকত বা ইউটিলিটি কমে যাওয়ার ফলে।

smart-3874907_1920.jpg

Source: Image by Gerd Altmann from Pixabay


এই বরকত বিষয়টা অনেকের হয়তো বুঝতে সমস্যা হয়। এটা বুঝানোর জন্য আমি আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি যেমন কিছু মানুষ মাসে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করার পরও খুব স্বাচ্ছন্দে এবং সুন্দরভাবে তাদের জীবনকে পরিচালনা করতে পারেন আবার অনেকেই মাসে ১ লক্ষ টাকা আয় করার পরও তার চাহিদা যেমন শেষ হয় না তেমনি অভাব বা দায়দেনা শেষ হয়না। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে এর মধ্যে বরকত হওয়া এবং না হওয়া।

তবে একথাও ঠিক বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আমরা চাইলে আমাদের সময়কে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে নিতে পারি। কারণ হচ্ছে যখনই আমরা অনলাইন ভিত্তিক কোন কার্যক্রমে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করি তাহলে আমার একঘন্টা সময় অনেক মানুষের কাছে হাজার হাজার মিনিট বা ঘন্টা হয়ে ফিরে আসছে। আবার কোন একটা ভালো কিংবা খারাপ খবরকে সহজেই মুহূর্তে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারছি। সর্বোপরি প্রযুক্তির কোন দোষ নেই। দোষ হচ্ছে আমরা যারা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছি তাদের।

child-3310208_1920.jpg

Source: Image by Gemma Moll from Pixabay


শেষকথাঃ

তবুও দিনশেষে আমাদের এটা ভাবা উচিত যে, আমাদের কি সেই ফ্লপি ডিস্ক থাকলে বা মোবাইল কিপ্যাড ফোন থাকলেই ভাল হত? প্রযুক্তি ব্যবহারের পন্যগুলীর বিজ্ঞাপনে আমাদের বলা হয় এতে আপনার সময় বাচবে, কাজ সহজ ও দ্রুত হবে। হয় সত্যি। কিন্তু আদৌ কি আমাদের সময় কাজ করার ক্ষেত্রে কমে আসছে নাকি এটাই আমাদেরকে বিভিন্নভাবে জড়িত করে কাজে সময়টাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা ওই প্রযুক্তি দিয়ে অলস বা আসক্ত হচ্ছি নাতো!!!



হাইভের বেসিক বিষয়ের উপর আমার বাংলায় লেখা কিছু পোস্টঃ

নিচের কোন টপিক সম্বন্ধে জানার প্রয়োজন হলে পড়ে আসতে পারেন।

আমার অভিজ্ঞতা ও নতুনদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা

গতানুগতিক সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে হাইভের পার্থক্য

হাইভ থেকে টাকা আয় করার উপায়গুলো কি কি

হাইভে নামের পাশে যে রেপুটেশন (Reputation) দেখায় তা কি, কেন, কীভাবে হিসাব করা হয় ও গুরুত্ব বিস্তারিত

হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) নিয়ে বিস্তারিত

হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) এর মধ্যে পার্থক্যগত সম্পর্ক

রিসোর্স ক্রেডিট নিয়ে বিস্তারিত যা নতুনদের জানা জরুরী

কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ১

কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ২

কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৩

কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৪ ও শেষ পর্ব

ডেলিগেশন কি ও বিস্তারিত

ভোটিং পাওয়ার ও এর হিসাব নিকাশ

হাইভে ডাস্ট কি ও কীভাবে তা সেভ করতে পারবেন

আমি কে




আমি বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন প্রভাষক এবং সদ্য বাবা। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি আমার বন্ধুদের এবং সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসি। ইউটিউব, ডিটিউব, হাইভে ব্লগিং করতে ভালবাসি। আমি শেয়ার করতে চাই ওইসবকিছু যা আমি শিখেছি যাতে মানুয আমার থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে। আমি আমার ব্লগে টেক্সটাইল, অনলাইন আয়, ও নানান রকম আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস হিসেবে সবার থেকে শিখতে চাই ও এই কমিঊনিটির সাথে এগিয়ে যেতে চাই।


zxddz4gt63.gif

Upvote, Resteem and Follow me on hive @engrsayful


Find me on social media

Follow me on DTube
Follow me on Youtube
Follow me on ThreeSpeak
Follow me on Facebook
Follow me on Twitter



0
0
0.000
3 comments
avatar

Waste your time wisely!
অনেকে লেখালেখির সাথে সংসার ও সামলাইছেন, আনার দুই-তিনটা প্রেম ও করছেন😁😁। প্রফেসর রাজ্জাক কিন্তু কোব বই লিখেননি, কিন্তু তিনি এক পুরোধা হিসাবে পূজিত।

0
0
0.000
avatar

যদি আহমেদ সফা যদ্যপি আমার গুরু না লিখতেন, তাহলে হয়ত আমরা প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক স্যার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারতাম না। এরকম অনেক জ্ঞানতাপস আমাদের সমাজে এখনো আছেন। কেউ কেউ আহমদ ছফাদের মত ব্যক্তির মাধ্যমে আমাদের নিকট পৌঁছেন, আর কেউ কেউ হারিয়ে যান কালের গর্ভে।

আমি মাঝে মাঝে কিছু সাহিত্যিকদের দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই, যারা সারা জীবন এতো বই লিখে গেছেন যে- সে এক জীবনে পড়ে শেষ করতে পারি না। অথচ তারা এগুলো লেখার পাশাপাশি তাদের জীবন, সংসার, সমাজ সবকিছু কন্টিনিও করে গেছেন। কিভাবে পারেন!

0
0
0.000