প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ (০2) : নেট স্পিড (আমরা ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে ঠকছি নাত!) (MBps or Mbps)
সূচনা
মাঝে মাঝে কিছু বিষয় মাথায় ঘোরপাক খায়। আর সেগুলোকে কাগজে কলমে রূপ দিতে ইচ্ছে করে। তাই বিডিকমিউনিটি ধারাবাহিকভাবে প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ
নামে সিরিজ লিখছি। যে কোন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে এই সিরিজে নিয়মিত লিখার ইচ্ছা আছে। তো দেরী না করে চলুন আজকের পর্ব শুরু করা যাক…
MBps নাকি Mbps
অর্থাৎ বড় বি (B) নাকি ছোট বি(b)? এ নিয়ে সমস্যার একটা সত্যিকারের বাস্তব ঘটনা বলি তারপরে আজকের টপিক শুরু করছি। একবার কোন একটা কম্পিউটার মার্কেটের দোকানে মডেম কিনতে গিয়েছিলাম। তো সেখানে ওই দোকানদার আমাকে মডেমের স্পিড (ডাউনলোড এবং আপলোড স্পিড) সম্বন্ধে বিশেষ করে বোঝাচ্ছিলেন। উনি বলতে চাচ্ছিলেন যে আসলে মডেমের গায়ে যে স্পিড বলা থাকে তার চেয়ে অনেক বেশি স্পিড আসলে পাওয়া যায়। তো আমি তাকে অনেক করে বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে আসলে ছোট এবং বড় বি তে পার্থক্য আছে। একটার চেয়ে আরেকটা ৮ গুন বড় ছোট। তিনি আসলে কিছুতেই কথা শুনতে রাজি হচ্ছিলেন না । পরবর্তীতে আমি ওই দোকান থেকে অন্য দোকানে গিয়ে পণ্যটি কিনতে হয়েছিল।
কোন কিছু বুঝতে না পারা বা কম জানা মানুষের দুর্বলতা বা অক্ষমতা নয় বরং সেই বিষয় নিয়ে তর্ক করা বা নিজে বেশি জানার ভাব নেওয়াটা হচ্ছে অসুবিধা। এই সমস্যাটি আমি কেবলমাত্র যে ওই দোকানেই পেয়েছি তা নয় বরং বাস্তব জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এই নেট স্পিড এবং ব্যান্ডউইথের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে অনেককেই ভূল করতে দেখেছি। এদের মধ্যে কিছু আছে যারা বুঝানোতে বুঝে গেছে আর যারা বুঝতে চায়নি তারা তাদের ধারণা নিয়েই আছে।
বর্তমান সময়ে যেহেতু টেকনোলজিতে আমরা অনেক উন্নত এবং আইসিটি বিষয়কে সবাইকে বাধ্যতামূলক করে পড়ানো হয় সেহেতু এ বিষয়টাতে বর্তমান জেনারেশনের অনেকেরই গেপ নেই। কিন্তু আগেকার সময়ে অনেকের মাঝে এই ব্রডব্যান্ড হিসাব-নিকাশে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে। তাই ছোট বি ও বড় বি এর ব্যাপারটা সহজে বুঝানোর চেষ্টা করব।
আসলে ছোট হাতের বি (b) হচ্ছে bit আর বড় হাতের বি (B) হচ্ছে বাইট Byte । একটা বাইট হচ্ছে একেকটা অক্ষর যেমন ক, a, 1, - ইত্যাদি। স্পেস ও একটি ক্যারেক্টার যা এক বাইট এর সমান। কিন্তু এই লেখাটি কম্পিউটারের স্কিনে লিখা বা ইন্টারনেট থেকে নামানোর সময় কম্পিউটার কিভাবে বুঝবে এটা ক বা - । তাহলে কম্পিউটার আসলে ৮ টি বৈদ্যুতিক সংকেত থেকে বুঝতে পারে যে কোনটি ক বা - । এই সংকেতগুলো আসলে হাই ভোল্ট ও লো ভোল্ট মানে বাইনারীর ভাষায় ১ ও ০ । তো এই প্রত্যেকটি কে একেকটি বিট বলে। বিট মানে বৈদ্যুতিক বিট বা সিগনাল। তাই ৮ বিট মিলে ১ বাইট হয়।
আমরা যখন কোথাও কিছু লিখছি অথবা নেট থেকে কোন লেখা নামাচ্ছি অথবা আপলোড করছি তখন একেকটা অক্ষর (ক্যারেক্টার) হোক কিংবা স্পেস বা দাড়ি তার জন্য এক বাইট (মানে ৮ টি সিগনাল বা বিট) দরকার হচ্ছে। আটটা বৈদ্দুতিক সংকেত (বা বাইনারি সংখ্যা) মিলে আসলে একটা বাইট হয়। তাই বিট এবং বাইটের ক্ষেত্রে পার্থক্য হবেই।
আমরা যখন বাজার থেকে এমবিপিএস(Mbps = মেগা বিট পার সেকেন্ড অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে কত মেগা বিট) গতিতে ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেই আর যদি তা Mbps হয় তাহলে আমি সত্যিকার অর্থে তার ৮ ভাগের এক ভাগ MBps পাব। (১ মেগা মানে হচ্ছে ১০ লক্ষ বা ১ মিলিয়ন) 1Mb (মেগা বিট) মানি হচ্ছে হাজার ১০২৪ Kb (কিলোবিট)। সেই হিসেবে ৮ দ্বারা ভাগ দিলে পাওয়া যাবে ১০২৪/৮ =১২৮ KBps (বড় B, মানে বাইট)
Source: Image by mohamed Hassan from Pixabay
যখন নেট স্পিড চেক করার জন্য কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করি তখন সে সব সফটওয়্যার গুলোতেও সাধারনত বড় হাতের বি(বাইট) দিয়ে দেখানো হয় (চাইলে সেটিং এ কেউ পরিবর্তন করে ছোট বি করে নিতে পারে) কিন্তু আমরা যখন বাজার থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেই তখন কিন্তু ছোট হাতের বি (বিট) এ বিক্রি করা হয়। আমরা নেট স্পিড মনিটরে যদি বড় বি দেখি তাহলে তা আমাদের নেট সার্ভিস প্রোভাইডারের আট ভাগের এক ভাগ হলে আমাদের ইন্টারনেট সংযোগ ঠিক আছে এ নিয়ে তর্ক করার কিছু নেই। অর্থাৎ আমি যা টাকা প্রদান করেছি তার মূল্য ঠিকভাবে পাচ্ছি।
কিন্তু যদি এমন হয় আমি ৫ Mbps লাইন নিলাম কিন্তু কখনো ৩০০ KBps এর উপরে আপলোড/ ডাউনলোড (ভালো কোন সার্ভারে) করতে পারলাম না তাহলে বুঝতে হবে যে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আমাদেরকে ঠকাচ্ছে। কারণ ৩০০ KBps এর (৮ গুণ করলে) সমান হচ্ছে ২৪ Kbps অথবা আনুমানিক ২.৪ Mbps এর মত। যা সত্যিকার অর্থে 5 Mbps এর চেয়ে অনেক কম ও প্রায় অর্ধেক ।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখা জরুরী যে, ইন্টারনেট সংযোগ গুলো শেয়ার নীতিতে দেয়া হয় অর্থাৎ যখন অনেক বেশি ব্যবহারকারী একসাথে ব্যবহার করে তখন স্পিড অটোমেটিক কমে আসে আবার যখন ব্যবহারকারী কম থাকে তখন স্পিড অটোমেটিক বেড়ে যায় । তবে যতই বাড়ুক না কেন, আপনি খুব ভোরবেলা অথবা গভীর রাতে যদি মোটামুটি কাঙ্ক্ষিত যত স্পিড আপনাকে অফার করা হয়েছে তা পেয়ে যান তাহলে বুঝা যাবে যে, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার টা ঠিক আছে । অন্যথায় আপনার উচিত তার সাথে কথা বলে আপনার ডাটা প্ল্যান চেঞ্জ করা অথবা সংযোগ বাতিল করে অন্য কারো থেকে সংযোগ নেয়া।
Source: Image by Adrian Malec from Pixabay
আর যদি ডেডিকেটেড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া থাকে তাহলে যতই ব্যবহারকারী থাকুক না কেন আপনার স্পিড কখনই কমবে না অর্থাৎ আপনাকে নির্দিষ্ট এমবিবিএস সব সময় দিতে বাধ্য। অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য ডেডিকেটেড সংযোগ নেয়া হয় । অনেক সময় এই আইএসপি (ইন্টারনেট সংযোগ প্রোভাইডার)রা ডেডিকেটেড সংযোগের কথা বলে শেয়ার ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে থাকে। তাই আপনি আপনার মত করে চেক করে নিবেন।
আমরা এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিনিয়ত ঠকে যাচ্ছি। যাতে ঠকতে না হয় তাই বিস্তারিত ভাবে বলার চেষ্টা করলাম। আপনি নেট থেকে যেকোন স্পিড টেস্ট অ্যাপস কিংবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার ইন্টারনেট স্পিড চেক করে (যেমন windows এ netspeedmonitor সফটওয়্যার, android এ speedtest app, website beta.speedtest.net থেকে) তারপর বারগেন করতে পারেন। তাহলে এই হিসাবটা যারা বুঝবে তাদেরকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কর্তৃক ঠকানো খুব কঠিন ব্যাপার হবে আশা করি।
শেষকথা
তাই আসুন সবাই কনজ্যুমার হিসেবে একটু সচেতন হই এবং নিজেদের ইন্টারনেটের বিল দেয়ার সময় এবং সংযোগ নেয়ার সময় কি পাচ্ছি আর কি দিচ্ছি সেই হিসাবটা ঠিকঠাক মিলিয়ে নেই। কারণ প্রযুক্তির এই যুগে কোন ইনফরমেশন আর লুকানো যায়না। তাই চোখ কান খোলা রেখে প্রকৃত মূল্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা উদ্যোগী হয় এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
Source: Image by mohamed Hassan from Pixabay
এই সিরিজের আগের পোস্টগুলোঃ
প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ (পর্ব ১) : সময়ের বরকত
হাইভের বেসিক বিষয়ের উপর আমার বাংলায় লেখা কিছু পোস্টঃ
নিচের কোন টপিক সম্বন্ধে জানার প্রয়োজন হলে পড়ে আসতে পারেন।
আমার অভিজ্ঞতা ও নতুনদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা
গতানুগতিক সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে হাইভের পার্থক্য
হাইভ থেকে টাকা আয় করার উপায়গুলো কি কি
হাইভ একাউন্টের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় কী(Key) এর খুটিনাটি
হাইভে নামের পাশে যে রেপুটেশন (Reputation) দেখায় তা কি, কেন, কীভাবে হিসাব করা হয় ও গুরুত্ব বিস্তারিত
হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) নিয়ে বিস্তারিত
হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) এর মধ্যে পার্থক্যগত সম্পর্ক
রিসোর্স ক্রেডিট নিয়ে বিস্তারিত যা নতুনদের জানা জরুরী
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ১
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ২
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৩
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৪ ও শেষ পর্ব
সহজ ভাষায় ব্লকচেইন ও ডিজিটাল কারেন্সি
সহজ ভাষায় হাইভ ব্লকচেইন ও উইটনেসেস
হাইভে ডাস্ট কি ও কীভাবে তা সেভ করতে পারবেন
আমি কে
আমি বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন প্রভাষক এবং সদ্য বাবা। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি আমার বন্ধুদের এবং সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসি। ইউটিউব, ডিটিউব, হাইভে ব্লগিং করতে ভালবাসি। আমি শেয়ার করতে চাই ওইসবকিছু যা আমি শিখেছি যাতে মানুয আমার থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে। আমি আমার ব্লগে টেক্সটাইল, অনলাইন আয়, ও নানান রকম আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস হিসেবে সবার থেকে শিখতে চাই ও এই কমিঊনিটির সাথে এগিয়ে যেতে চাই।
Upvote, Resteem and Follow me on hive @engrsayful
Find me on social media
Follow me on DTube
Follow me on Youtube
Follow me on ThreeSpeak
Follow me on Facebook
Follow me on Twitter
Congratulations @engrsayful! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Hi @engrsayful, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON