প্রযুক্তির এপিঠ-ওপিঠ

avatar
(Edited)

প্রযুক্তির প্রভাবে আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি ও রাজনীতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে যার ফলে আমাদের জীবনমান ও সামাজিক কৃষ্টি-কালচারে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে-এটা অস্বীকার করার উপায় কারো নেই। আমাদের সামাজিক রাষ্টীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রযু্িক্তর অবদান অনস্বীকার্য।প্রযুক্তির বৈপ্লবিক উন্নয়নের কারনে আমরা বিশে^ ঘটে যাওয়া যেকোন ঘটনা মহূর্তের মধ্যে জানতে পারি। প্রযুক্তির অভ’তপূর্ব উন্নয়নে সারা পৃথিবী আজ ওলট-পালট।আজ এদেশ একটা যন্ত্র বানিয়েছে তো কাল অন্য দেশ তাকে টেক্কা দিচ্ছে। এভাবেই প্রযুক্তি তার মহিমাকে সবার জন্য বিলিয়ে দিচ্ছে। যে দেশ প্রযুক্তিতে যত বেশী পারদর্শী সে দেশ তত বেশী উন্নত ও ক্ষমতাধর।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যাবে তা আমরা কেউ জানিনা। প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন অনেক কিছু শিখেছি আবার হারিয়েছিও অনেক কিছু।
পৃথিবীর প্রতিটা রাষ্ট্র তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার কারনে অভ’তপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে। প্রতিটা দেশের প্রতিটা নাগরিকের হাতে হাতে মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ আরও অনেক উন্নতমানের ডিভাইস যা আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে দিয়েছে। আমাদের প্রতিটা কাজ অতি দ্রæত সময়ে আমরা সম্পাদন করতে পারছি প্রযুক্তির অবদানে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে উন্নতি ঘটেছে সামরিক সরঞ্জাজামাদিতেও। এক দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে আরেক দেশ তৈরী করছে উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান,ট্যাংক, আর্টিলারি, রকেট প্রজেক্টর,বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ডেস্ট্রয়ার, সাবমেরিন, ফ্রিগেট্স, ফাইটার জেড,হেলিকপ্টার, স্বচালিত আর্টিলারী, ডেডিকেটেড এ্যাটাকসহ আরও অনেক অস্ত্র যা প্রতিটা দেশকে সামরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী করেছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রতিটা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং এর প্রয়োজনীয়তা বর্ননা কওে শেষ করা যাবে না বরং দিনকে দিন এর চাহিদা প্রয়োজনীয়তা বাড়বেই। প্রযুক্তির ছোঁয়া পুরো দেশ ও জাতি ও বিশ^কে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।
এবার আসি প্রযুক্তির ওপিঠের কথায়। প্রযুক্তির অভ’তপূর্ব উন্নতি বিশে^র প্রতিটি দেশ ও জাতিকে উন্নতির স্কর্ণ শিখরে পৌছে দিয়েছে একথা অস্বীকার করার কারো উপায় নাই। কিনÍু এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে বিশে^র শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে নিষ্পেষন করছে বিভিন্ন অজুহাতের ধূয়া তুলে। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক শক্তির দাপটে আফগানিসÍান, লিবিয়া, ইয়েনমেন সিরিয়া, ইরাক, সোমালিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন অজুহাতে দখল করে রেখেছে। তাদের সামরিক শক্তির বড়াই দেখিয়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশের মানুষকে পাখির মত গুলি করে মারছে। প্রযক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে ভয়ংকর সব রাসায়নিক অস্ত্র যা মহূর্তের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫৫% যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিন্তু প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে আমরা কোথায় নেমে যাচ্ছি তা কখনও অনুধাবন করেছি কখনো ? বিটিআরসির হিসেবানুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার কারির সংখ্যা ৮ কোটি ৮৯ লাখ এবং সারা বিশে^ ৩৪২ কোটি এবং বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ যা সারা বিশে^ ১৮৬ কোটির উপরে।
image.pngimage source

বর্তমানে প্রায় প্রতিটা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ের হাতে হাতে মোবাইল ফোন যার বেশির ভাগই ইউটিউব ফেসবুক ও টিকটকে মসগুল থাকে। এসব ছেলে-মেয়েরা মনে করে তাদের মা-বাবাদের বিভিন্ন রকম ভুল-ভাল বুঝিয়ে নিদেনপক্ষে একটা মোবাইল বাগিয়ে নিতে পারলেই কেল্লা ফতে। প্রকৃতপক্ষে ঘটছে ও তাই। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা ও উন্নত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের কষ্টার্জিত টাকা তাদের অতি আদরের ছেলেমেয়েদের পেছনে খরচ করতেতারা দ্বিধাবোধ ও কার্পন্য করে না। এখানে উল্লেখ্য যে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের প্রতিটা বাবা-মা-ই প্রযুক্তিগতভাবে একেবারেই দক্ষ নয়। তাই তাদেরকে অতি সহজেই কব্জা করা যায়। এখানে ঢালাও ভাবে সমস্ত ছেলেমেয়েকে বোঝানো হয়নি বরং অধিকাংশের কথা বলা হয়েছে। অনেক ভালো ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা তাদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য পড়াশোনাসহ যাবতীয় ইতিবাচক কাজ নিয়ে সব সময় ব্যসÍ থাকে।
image.png
image source
নৈতিকতাহীন মানুষের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের প্রযুক্তি।অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ার মাধ্যমে তারা যেমন খারাপ সাইটগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়েছে তেমনি তাদের মধ্যে অপারাধ প্রবণতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে কোমলমতি ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তির ভালোদিকগুলোর চেয়ে খারাপ দিকগুলোর দিকেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে যার ভয়াবহতা আমরা এখনও উপলদ্ধি করতে পারছি না। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সাইবার অপরাধ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তার পরিচয় গোপন রাখতে পারে বলে কাউকে হুমকি-ধামকি দিতে দ্বিধাবোধ করে না। এমনকি ভ’য়া সম্পর্ক তৈরী থেকে শুরু করে কারো অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গোপন ক্যামেরায় ধারন করে বø্যাকমেইলের অহরহ ঘটনা ঘটছে। যার মাধ্যমে হাজার সংসার ভাঙছে, রোমহর্ষক খুনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।হাতে হাতে মোবাইল থাকার কারনে যেকোন ধরনের ভিড়িওক্লিপ মুহূতেৃর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা অনেক মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে চিরতরে।
image.pngimage source

আমাদের কোমলমতি শিশুদের ধ্যান-জ্ঞান মোবাইল কম্পিউটার কেন্দ্রিক হওয়ার কারনে তারা সারাক্ষণ মোবাইল ও কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকে যার ফলে তাদের চিন্তা-চেতণা মোবাইল ও কম্পিউটার কেন্দ্রিক হয়ে থাকে।তারা বাইরের জগৎ সম্পর্কে ভাবার চিন্তা করে না বা আগ্রহ থাকে না। যার ফলে তাদের মেধা ও মননের পূর্ণ বিকাশ সাধিত হয় না।আমাদের অধিকাংশ অভিভাবক স্বল্প শিক্ষিত হওয়ার কারনে তারা মনে কওে আমাদের ছেলেমেয়ে আমাদের থেকে বেশি শিক্ষিত এবং তারা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝে।যার ফলে অতি সহজেই তাদেরকে বোঝানো সম্ভব যে মোবাইল বা কমিবপউটার পড়াশোনার জন্য একটা অপরিহার্য উপাদান। যার ফওে সামর্থ না থাকা সত্তে¡ও অভিাবকগণ ধার-দেনা করে তাদের ছেলেমেয়েদেরকে মোব্ইাল বা কম্পিউটার কিনে দিতে বাধ্য হন।
image.pngimage source

মোবাইল বা কম্পিউটার বাচ্চা শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য এক ভয়াবহ উপাদান। আমাদের দেশের অধিকাংশ মায়েরাই তাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় কম্উিটার বা মোবাইলে গেম্স দেখিয়ে তারপর খাওয়ান যা পরে অভ্যাসে পরিনত হয়।এর ফলে মোবাইলের ক্ষতিকর রশ্নি তাদের চোখের মারাত্বক ক্ষতি করে। ফলে শিশুরা মেধা ও বুদ্ধিহীন হয়ে যায়, চোখে কম দেখে এমনকি প্রতিবন্ধিও হয়ে যায়।
তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ চুরি হচ্ছে। চাকরিজীবিরা চাকরি ছাড়ার সময় তাদের পূর্বেও অফিসের তথ্য চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের অগোচরে।এছাড়া ক্রেডিটকার্ডের গোপন নম্বর জেনে সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
পরিশেষে একথাই বলা যায় যে, প্রযুক্তির উন্নতি যেমন আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি ক্ষতির ও অনেক কারন হয়েছে। এতে প্রযুক্তিকে দোষারোপ করার কোন উপায় নেই। প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার ও অপব্যবহারের উপর নির্ভর করে তার সুফল ও কুফল। সুতরাং প্রযুক্তিকে আমরা যেভাবে ব্যবহার করব সেরকম ফল পাব।



0
0
0.000
0 comments